অরুনিমা
সকালে ঘুম থেকে উঠেই আনমনে হাঁটতে হাঁটতে বারান্দায় চলে গেলাম। আজ ছুটির দিন। তাই, কাজ কর্মের কোন তাড়া নেই। বারান্দায় গিয়ে আকাশের দিকে তাকালাম। সকালের রোদে আকাশটি ঝলমল করছে। প্রতিদিনই আকাশটি দেখি কিন্তু কোনদিনই পুরাতন মনে
হয়না। মেঘের টুকরা আর রোদের ঝিলিক দিয়ে প্রতিদিন যেন স্রষ্টা ক্যানভাসে একটা নতুন
ছবি আঁকে। চোখ থেকে ঘুম এখনও যায়নি। আশেপাশে তাকাচ্ছি আর ভাবছি আজ কি কি করা যেতে পারে।
আমাদের বারান্দাটা মোটামুটি বড়ই বলা যেতে পারে। ৫ ফুট বাই ১০ ফুট হবে। বারান্দার বাইরে আবার ২ ফুট করে বাড়তি জায়াগা আছে, যেখানে বাবা নানা রকমের ফুল গাছ লাগিয়েছে। এমনকি মরিচ, লেবু গাছ আর ধনেপাতাও আছে এর মাঝে। হঠাৎ সেই গাছ গুলোরই কোনায়, একটু দূরে একটি সদ্য ফোঁটা ছোট সাদা ফুল দেখতে পাই। ফুলটির স্নিগ্ধ সুন্দর শুভ্র রূপ দেখেই ভালবেসে ফেলি। আশ্বিনের মৃদ মিস্টি বাতাসে ফুলটি দোলছে, আর আমার কাছে মনে হচ্ছে ফুলটি যেন হাসছে। ফুলটির গন্ধ আছে কিনা, নাকি বাবার লাগানো কোন ভেষজ গাছের ফুল, কি তার নাম – সে সব কিছুই আমার জানা নেই। আর জানার কোন প্রয়োজনও দেখছিনা।
আমাদের বারান্দাটা মোটামুটি বড়ই বলা যেতে পারে। ৫ ফুট বাই ১০ ফুট হবে। বারান্দার বাইরে আবার ২ ফুট করে বাড়তি জায়াগা আছে, যেখানে বাবা নানা রকমের ফুল গাছ লাগিয়েছে। এমনকি মরিচ, লেবু গাছ আর ধনেপাতাও আছে এর মাঝে। হঠাৎ সেই গাছ গুলোরই কোনায়, একটু দূরে একটি সদ্য ফোঁটা ছোট সাদা ফুল দেখতে পাই। ফুলটির স্নিগ্ধ সুন্দর শুভ্র রূপ দেখেই ভালবেসে ফেলি। আশ্বিনের মৃদ মিস্টি বাতাসে ফুলটি দোলছে, আর আমার কাছে মনে হচ্ছে ফুলটি যেন হাসছে। ফুলটির গন্ধ আছে কিনা, নাকি বাবার লাগানো কোন ভেষজ গাছের ফুল, কি তার নাম – সে সব কিছুই আমার জানা নেই। আর জানার কোন প্রয়োজনও দেখছিনা।
বেলা যখন বাড়তে থাকে তখন আবার বারান্দায় আসি। দেখি, ফুলটির উপর সূর্যের আলো এসে
পড়েছে। ঈশ্বর যেন তার আলোয় ফুলটিকে আলোকিত করে তোলেছে। ফলে জগতের সমস্ত যৌবনের আলো যেন
এক মূহুর্তের জন্য তার মাঝে প্রকাশ পাচ্ছে। আর ফুলটিও যেন তার আপণ প্রানশক্তি অনুধাবন করতে
পেরে নিজ সৌন্দর্যের সবটুকু ছড়িয়ে দিতে চাচ্ছে। আমি কেবল বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখছি, আমি মুগ্ধ, স্তম্ভিত, এবং কৃতঞ্জ - ছোট এই ফুলটিকে দেখে।
ঘড়ির কাঁটা যতই ঘুরতে থাকে আমার আগ্রহ ততই বাড়তে থাকে।
ফলে দূর থেকে কাছে যেতে থাকি, অজানাকে জানার চেষ্টা করতে থাকি। কিন্তু কিবা আর জানার আছে? বারান্দায় কোনায় জমে থাকা মাটিতে কোন আগাছা জাতের গাছ হবে এই ফুল গাছটি। নাকি আমার নিজের উদ্ভিদবিদ্যায় জ্ঞান শূন্যের কোঠায় বলে আমি ছোট্ট এই গাছটিকে ঠিকমত চিনতে পারছি না। হে ঈশ্বর! এমনই এক ছোট্ট সাধারন গাছে এই মায়াবী ফুলের জন্ম!
আমার কৌতুহল আমাকে ফুলটির কাছে যেতে বাধ্য করল। যখন ফুলটির কাছে গেলাম, তখন বুঝলাম ফুলটির কোন গন্ধ নেই। অন্য কোন বিশেষ গুন আছে কিনা বোঝতে পারছি না। আমাদের এই সাজানো সুন্দর বারান্দায় অন্য সকল দামি, বহুগুনী গাছের সাথে এই গাছটি কিভাবে থাকবে? যার জন্য সকালটিকে সার্থক মনে হয়েছে, এখন তাকেই এই জগতের বিচারে মূল্যহীন মনে করি কি করে? আমি জানি না, আমি কেন তাকে জগতের ব্যবসায়িক
লাভ লোকসানের চশমায় দেখছি?
আস্তে আস্তে বিকাল হতে থাকে। বিকালে সূর্যের তেজ যখন কমতে থাকে তখন ফুলটির সৌন্দর্যে
যেন এক কালো ছায়া নেমে আসে। মসৃন দ্বীপ্ত পাঁপড়ি গুলো মলিন হতে থাকে। সেই সাদা পাঁপড়ি গুলোতে বিকালের কমলা আলো এসে পড়ছে। মনে হচ্ছে ফুলটির সময় শেষ হয়ে আসছে। আমি
বারান্দায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কেবলই ফুলটিকে দেখছি। তাকে
রক্ষা করতে না পারি, কিন্তু ত্যাগ করি কোন সাহসে? তাই সূর্যের শেষ কিরণের জন্য
অপেক্ষা। জীবনের একটি অলস ছুটির দিন না হয় নাম না জানা এক অজানা ফুলের জন্য নষ্ট হল।
কিন্তু সকল নষ্ট সময়ই জীবনকে নষ্ট করে না।
আশীষ কুমার চন্দ
জগন্নাথ হল
১১।০৯।২০১৩
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন