ধর্ম কি?

উৎসর্গঃ বড় মামা।

= আপনি কি হিন্দু?
- হ্যাঁ।
= আপনি কি হিন্দুধর্ম চর্চা করেন?
- না।
= আপনার বাবা নাকি ব্যারিস্টার?
- হ্যাঁ।
= আপনি কি ব্যারিস্টার?
- না। আমি কেন ব্যারিস্টার হতে যাব। আমি কি ব্যারিস্টারি নিয়ে পড়ালেখা করেছি নাকি।
= ঠিক। আপনার বাবা ব্যারিস্টারি নিয়ে পড়ালেখা করেছি, তাই ব্যারিস্টার। তেমনি যদি আপনি হিন্দুধর্ম চর্চা করেন তবে নিজেকে হিন্দু বলবেন।
- সব সময় সবকিছু অনুসরণ করা হয় না। তবে পূজার সময় তো মেনে চলি।
= তাই, তা পূজার সময় কি করেন?
- নতুন জামা কাপড় পড়ি, বড়দের নমস্কার করি, মন্দিরে যাই, মণ্ডপে মণ্ডপে  ঠাকুর দেখি, প্রসাদ খাই।
= ভাল কথা। আমার এক মুসলমান বন্ধু আছে। খুবই ক্লোজ। সেও আমাদের বাসায় নিয়মিত আসে।
পূজার সময় নতুন জামা কাপড় পড়ে, বড়দের সালাম করে, আমার সাথে মন্দিরে যায়, প্রসাদ খায়।
আচ্ছা, তাহলে সেকি হিন্দু?
- না। তা কি করে হয়? সে তো নামাজ পড়ে, রোজা রাখে, ঈদ করে। সে তো হিন্দু হতে পারে না।
= সেটাই বলছি। আপনি নিজেও এমন কিছু করেন না, যে আপনাকে হিন্দু বলা যাবে।
- করি তো। সস্বরসতী পূজার সময় উপবাস থাকি।
= আচ্ছা, তাহলে তো ভাল কথা। কিন্তু সেই দিন আর কি কি করেন?
- সেদিন আর পড়াশুনা করিনা। ঘোরাঘুরি করি। বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেই।
= তা সেই আড্ডার মাঝে আবার চা-বিস্কিট, সিগারেট বা একটু ইয়ে কি চলে?
- হ্যাঁ। সেটা তো চলেই।
= ৩৬৫ দিনের মাঝে একদিন উপবাস থাকেন, সেই দিনটিও ঠিক ভাবে মেইনটেইন করতে পারেন না!
- আরে দাদা, এরকম তো হয়ই। অনেক মুসলমানেই তো এখন রোজা শেষে বিড়ি-সিগাড়েট খাচ্ছে।
= আপনি তাদেরকে কেন দেখতে যাবেন? আপনি আপনার নিজেকে দেখেন, নিজের ধর্ম দেখেন ।
- তবে আপনি কি বলতে চান আমার কোন ধর্ম নেই? আমি নাস্তিক।
= না, সেটা এখনই আমি বলতে পারছিনা। তার আগে বলুন,  আপনি কি চুরি করেন, মিথ্যা কথা বলেন, অন্যায় করেন?
- না।
= তবে আপনাকে ধার্মিক বলা যেতে পারে।
- এই বললেন আমি হিন্দু না। আবার বলছেন আমি ধার্মিক! কি বলছেন, কিছুই তো বুঝা যাচ্ছে না।
= হিন্দু না হলেও একজন মানুষ ধার্মিক হতে পারে। আপনি মানবতার  ধর্ম পালন করছেন। যেটা পৃথিবীর সমস্ত ধর্মেই বলা আছে।
কিন্তু আপনি হিন্দু সেটা বলার জন্যে আপানাকে কিছু বিশ্বাস, আচার, আচারন, নিয়ম মেনে চলতে হবে।
- কিন্তু আমি তো হিন্দুধর্ম জানি। স্কুলে থাকতেই রামায়ন, মহাভারত সব পড়েছি।
= এতক্ষন পর একটা খুব খাঁটি কথা বলেছেন।
- বলেছিলাম না, আমি হিন্দু। (মুখে এক গাল হাসি নিয়ে বললেন)
= না, আপনি আসলে বুঝতে পারেন নি, আমি খাঁটি কথা বলতে কি বুঝিয়েছি।
- কি?
= বেশীর ভাগ হিন্দুই মনে করে, রামায়ন মহাভারত জানা মানে হিন্দু। তাছাড়া, সে হিন্দু নয়।
- ঠিক তাই তো।
= না । তা ঠিক না। তার আগে বলেন, আপনি কি ক্লাসে পদ্মা নদীর মাঝি উপন্যাসটি পড়েছেন?
- হ্যাঁ। বেশ কয়েকবার। সিনেমাটিও দেখেছি।
= তাহলে আপনি পদ্মা নদীর মাঝিদের জীবন ধরন ভালভাবেই জানেন।
- হ্যাঁ।
= তাহলে আপনি নিজেকে কেন পদ্মা নদীর মাঝি বলছেন না?
- কারন আমি তাদের মত জীবনযাপন করি না।
= এটাই হচ্ছে সেই খাটি কথা। রামায়ন, মহাভারত পড়লেও আপনার জীবন আদর্শ রামচন্দ্র বা যুধিষ্ঠিরের মত নয়। তাই সেটা পড়া যে কথা, আর কোন উপন্যাস পড়া একই কথা।
আর রামায়ন মহাভারত হচ্ছে পুরাতন যুগের একটা ঘটে যাওয়া ঘটনা, যার মাঝে ধর্মের বিভিন্ন দিক গুলো দেখানো হয়েছে।
কিন্তু আপানার জীবনকে আপনি কি ভাবে সুন্দর করে রাখবেন এবং মনকে সুখি এবং শান্ত রাখবেন তা বলা নেই।
- তাহলে কি করতে বলেন? সারাদিন সাধু সন্ন্যাসদের মত ঠাকুরের নাম নিতে থাকব।
= না, এত বড় দুঃসাহস আমার নেই। আর সারাদিন ঈশ্বরের নাম নিয়ে সারাটা জীবন নষ্ট করে কি লাভ, তাহলে তো ঈশ্বরের সৃষ্টিকেই জানার, দেখার, ভালবাসার সময় হবেনা।
- তবে আমি কি করব, একটু বলেদিন।
= আমি আপনাকে কিছু বলে দিব, এটা এটা করুন, আর আপনি অন্ধের মত সেটা করবেন - এটাও ধর্ম  নয়।
আপনাকে নিজে থেকে নিজের  ধর্মকে জানতে হবে, ভালবাসতে হবে, বিশ্বাস করতে হবে। নিজের প্রতিদিনের কাজের মাঝে কিছু ভাল অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
ধর্ম  কোন পুস্তক নয় যেটা পড়লেই আপনি সেই ধর্মের হয়ে যাবেন।
ধর্ম  কোন পদবী বা সম্পদ নয়, যা আপনি দখল করে নিবেন।
ধর্ম  হচ্ছে সৎ আচরণ, অনুশাসন - যা আপনাকে অর্জন করতে নিতে হবে এবং আপনার প্রতিদিনের কাজের মাঝে তার ব্যবহার করতে হবে।

মন্তব্যসমূহ