আমেরিকায় গমন এবং অতঃপর ...

(এই লেখটা মূলত আমেরিকায় পড়তে আসা পি. এইচ. ডি. স্টুডেন্টদের উদ্দেশ্য করে লেখা হয়েছে।  লেখাটি কেবল মাত্র আমার ব্যাক্তিগত দৃষ্টিকোণ থেকে বর্ণনা করা হয়েছে। অন্যদের অভিমত ভিন্ন হওয়া স্বাভাবিক।)

উচ্চ শিক্ষার উদ্দেশ্যে আমাদের সকলেরই একটি স্বপ্ন হয় - আমেরিকায় পড়াশুনা করার। পড়াশুনার পাশাপাশি জীবনযাত্রার মান অনেক উন্নত এবং সুন্দর হওয়ার কারনে, এই স্বপ্নটি আমাদের জীবনের অন্যতম লক্ষ্য হয়ে যায়। আর তাই অসংখ্য প্রতিবন্ধক্তা এবং সময় সাপেক্ষ প্রক্রিয়া হওয়া শর্তেও  প্রতিবছর অনেক শিক্ষার্থী আমেরিকায় পড়াশুনা করার স্বপ্নটি সত্যি করে তোলছে। কিন্তু যে স্বপ্ন নিয়ে আমেরিকায় আসা হয় তার সব কিছু হয়ত সত্যি হয়না। ঢাকার চলচ্চিত্রে যেমন ঢাকার জ্যামে ভরা ব্যস্তময় জীবনের ছবি ফুটে উঠে না, তেমনি হলিউডের চলচ্চিত্রের সাথে পি. এইচ. ডি. লাইফ তুলনা করা অনেকটা বোকামি হয়ে যাবে। ভার্সিটির বড় ভাইয়া বা আপুদের প্রবাসী জীবনের রঙিন ছবি দেখেও মনে হতে পারে, আমেরিকায় জীবন অনেক সহজ, সরল আর সুন্দর, কিন্তু বিষয়টা হচ্ছে তারা কোনদিনই ল্যাবের ভিতরের হতাশার ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেনা অথবা প্রফেসারের মিটিংএ বাক-বিতণ্ডা হওয়ার সময় ফেসবুকে লাইভ থাকে না। আবার ব্যাপারটা এমন নয় যে, পি. এইচ. ডি. করতে যাওয়া মানেই সারাদিন পড়ালেখায় ডুবে থাকা; আসলে ভাল-মন্দ, আনন্দ-বেদনা - এই সবকিছু মিশিয়েই আমাদের প্রতিদিনের জীবনের পথচলা। আর সেই পথচলার গল্প নিয়েই আজকের এই লেখা। 

"দেখিতে পারি, শুনিতে পারি, কিন্তু হায়! কিবা বুঝিতে পারি!"
বিদেশের মাটিতে নামার পর পরই সবার প্রথমে এই অনুভূতিটি হয়। আশেপাশের সব মানুষ ইংরেজীতে কথা বলছে, আপনি নিজেও তাদের কথা শুনতে পাচ্ছেন, কিন্তু তারা আসলে কি বোঝাতে চাচ্ছে বা আপনি যখন কথা বলছেন, তখন আপনি কি বোঝাতে চাচ্ছেন - সেটা বোঝতে পারাটাই অনেক ঝামেলা। তার কারন, আমাদের ইংরেজী উচ্চারন তাদের মত নয়, আর তারা অনেক কিছু শর্টকাট বা চলিত ইংরেজীতে বলে - যার যাথে আমাদের ইংরেজী পাঠ্যপুস্তকের কথা বলার নিয়মাবলীর কোন মিল পাওয়া যায় না। তাই, প্রথম কিছুদিন আমেরিকানদের কথা বলার ধরনটি ভালভাবে লক্ষ্য করুন। তারপর দেখবেন আস্তে আস্তে আপনিও তাদের কথা বোঝতে পারছেন।

তাছাড়া আমেরিকার ভার্সিটি গুলোতে আর্ন্তজাতিক স্টুডেন্টদের জন্যে ইংরেজী কোর্স থাকে। আপনি চাইলে এই কোর্স গুলোতে ভর্তি হয়ে যেতে পারেন। "Ph.D. করতে এসে ইংরেজী কোর্স করব!" - এটা ভেবে লজ্জা করার কিছু নেই। এখানে চীন, ভারতসহ অনেক দেশের মেধাবী Ph.D. স্টুডেন্টদের ইংরেজী কোর্স করতে দেখা যায়। তাই, বিষয়টাকে সহজ ভাবে নিন এবং আপনার ইংরেজীতে দূর্বলতা কাটিয়ে উঠুন।

Temple University Bangladeshi
 Students Association in Pohela Boishakh
"বিদেশে বাঙালীই তো বাঙালী কে দেখবে"
নতুন একটি জায়গায় গেলে সেখানকার সবকিছুর সাথে পরিচিত হতে অনেকটা সময় লাগে। সেইক্ষেত্রে আপানার ভার্সিটিতে বাংলাদেশি কমিউনিটি থাকলে আপনি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করতে পারেন। শুধুমাত্র কাজের প্রয়োজনে নয়, বরং নিজেদের বিদেশ বিভুঁইয়ের জীবনের গল্প বলতে বা দেশীয় অনুষ্ঠান গুলো উদযাপন করতে বা যেকোন বিপদে-আপদে - দেশী মানুষদেরই কাছে পাবেন। দেশ থেকে হাজার মাইল দূরে আসার পর, এই ছোট গ্রুপটিই আপনার কাছে আপনার দেশ মনে হবে।

আরেকটি বিষয় হচ্ছে, আমেরিকায় আপনার ক্লাসে আপনার সমসাময়িক কোন বাঙ্গালী পাওয়া - অনেকটা ভাগ্যের ব্যাপার। আর যদিও কেউ থাকে, তার ক্লাস বা ল্যাব রুটিন আপনার থেকে আলাদা হওয়ায় স্বাভাবিক। এক্ষেত্রে আপনার বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোন বাঙ্গালীর সাথেই বন্ধুসুল্ভ সম্পর্ক গড়ে তুলুন। দেখবেন, তারাও আপনার সাথে কথা বলতে এগিয়ে আসবে। কারন, তারাও তাদের ভাল লাগা, খারাপ লাগা শেয়ার করতে চান।

"তোমার দোয়ায় ভাল আছি, মা"
পরিবার, পরিজন ছেড়ে বিদেশে এসে আমার সবাই একটা সময় সেই পরিবারের গুরুত্বটা বোঝতে পারি, তাদেরকে অনেক মিস করা শুরু করি। আর পরিবারের সবার প্রিয় মাকেই হয়ত বেশী মনে পড়ে। আমাদের মা আমাদের জন্য অনেক কষ্ট করেন, কিন্তু কোনদিনই তিনি আমাদের সেটা বোঝতে দিতে চাননা। তেমনি বিদেশের মাটিতে থেকে আপনাকেও হয়ত অনেক কষ্ট করতে হবে, কিন্তু সেই কথা গুলো কোনদিনই মাকে বলা হবে না। মাকে ফোন দিয়ে হয়ত বলবেন, "ভাল আছি, মা। সব কিছু ঠিক আছে।" এর বেশী কিছু মন বলতে চাইবে না।

এই সময় যদি নিজের মাঝে ছুটি গল্পের ফটিককে দেখতে পান, তবে অবাক হওয়ার কিছু নেই। জুতা সেলাই থেকে চন্ডী পাঠ - সবকিছু করার পর দিনশেষে একটুকু স্নেহের জন্যে মায়ের কথা মনে পড়তেই পারে। নিজের মাঝে এক বিশাল শূন্যতা অনুভব করতে পারেন। হয়ত কুরুক্ষেত্রের অর্জুনের মত আপনার মন অশান্ত হয়ে বলে উঠবে, "চাহি না মোর রাজ্যসুখ, খুঁজি ফিরি মোর স্বজন মুখ"।

শুধুমাত্র এই হোমসিক নিয়েই একটি বিশাল পোস্ট লিখে ফেলা সম্ভব। তবে যত দ্রুত সম্ভব এই হোমসিক কাটিয়ে উঠার চেস্টা করবেন। নিজেকে নানা কাজে ব্যস্ত করে ফেলবেন। আর পরিবারের সবার সাথে বেশী বেশী কথা বলবেন। এখন ভিডিও কল করার সুবিধাও চলে এসেছে। তাই মাঝে মাঝে ভিডিও কল দিবেন। আপনার প্রিয়জনদের মুখ, দেশে আপনার ঘর, আপনার পছন্দের বারান্দাটা দেখবেন - তাতে ভাল লাগবে।

দেশে ফেলা আসা বন্ধুদের কথাও ভুলবেন না। তাদের সাথেও বিদেশের মজার মজার ঘটনা গুলো শেয়ার করবেন, তার সাথে সাথে কোন প্রকার সঙ্কোচ না করে নিজের খারাপ লাগা, রিসার্চ কাজে প্রগেস না হওয়ার কথা বলবেন। মনে রাখবেন, "কথা বলাটা জরুরী।"

"গো + এষণা = গবেষণা"
গবেষণা শব্দটির সন্ধিবিচ্ছেদ দেখলে এর অর্থ দাঁড়ায় গরু খোঁজার ন্যায় অন্বেষণ করা। কিন্তু "Research" শব্দের বাংলা অর্থ করার জন্যে তৎকালীন ভাষাবিদরা কেন এই শব্দটি বেছে নিলেন? নিশ্চয় তারা কোন রসিকতা করতে চাননি। তাহলে কারনটা কি? আসলে আগের বাংলা সমাজে একজন কৃষকের কাছে সবচেয়ে প্রানপ্রিয় বস্তু ছিল তার গরু, আর সেই গরু হারিয়ে গেলে কৃষক প্রায় পাগলের মত তাকে খোঁজে বেড়াত। সেই গরুর হারিয়ে যাওয়ার খবর কেউ রাখত না, কৃষককেই তার হারিয়ে যাওয়া গরু খুঁজে বের করতে হত।
"Research" শব্দের বাংলা অর্থ করার ক্ষেত্রে ভাষাবিদরা এই রুপক গল্পের আশ্রয় নিয়েছেন। আপনি যখনই গবেষনা করবেন, তখন আপনাকে একটি বিষয় নিয়ে অনেকদিন পড়ে থাকতে হবে, আপনাকে সঠিক কারন বা তত্ত্বটি বের করে আনতে হবে। আর এই কাজটি আপনাকে একাই করতে হবে। ক্লাসের আসেইনমেন্ট যেমন ক্লাসের সবাই মিলে সমাধান করলেন, এটা তেমনি ল্যাবের সবাইকে নিয়ে সমাধান করবেন - বিষয়টা আসলে তেমন না। তবে আপনার সুপারভাইজার আপনাকে গাইড করবেন, কিন্তু সমস্ত কাজ আপনাকে একাই করতে হবে।
শুধু তাই নয়, আপনার এই কাজটিকে সুন্দর ভাবে লিখে একটা ভাল জার্নাল বা কনফেরন্সে পেপার হিসেবে প্রকাশ করার জন্যে সমস্ত কাজই আপনাকে করতে হবে। আর তাই আপনাকে অনেক ধৈর্যশীল হতে হবে। মাঝে মাঝে হতাশ হয়ে পড়বেন, কিন্তু হাল ছেড়ে দিবেন না। 

এই সময়ে অনেকে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েন। সেই রকম কিছু হলে, আপনি আপনার সুপারভাইজার বা ল্যাবমেট বা সিনিয়র কাউর সাথে কথা বলুন। কারন, তাদের এই সময়টার অভিজ্ঞতা আছে। আর যদি তেমন কাউকে না পান, তবে ভার্সিটির হেলথ সেকশন বা আর্ন্তজাতিক স্টুডেন্ট সোসাইটি (ISSS) এর সাথে কথা বলুন। তারা কাউন্সিলিং এর ব্যবস্থা করে দিবেন। তাদের সাথে সবকিছু শেয়ার করুন, দেখবেন তারা আপনাকে একজন বন্ধুর মত মনে করবে।

আর আপনার এত পরিশ্রম এবং ধৈর্যের পর যেদিন আপনার কাজটি পেপার হয়ে প্রকাশ পাবে, Google Scholar এ আপনার নাম উঠবে, সেদিন সত্যি খুব আনন্দ লাগবে। ঠিক, নিজের প্রানপ্রিয় হারানো গরুকে খোঁজে পাওয়ার মত নির্মল আনন্দ!

"স্ট্যাটাস কমপ্লিকেটেড"
আপনি এখানে স্টুডেন্ট হিসেবে আসবেন, কিন্তু যেহেতু আপনার RA বা TA কিছু একটা থাকবে, তাই আপনাকে কাজ করতে হবে এবং মাস শেষ হলে আপনি সেই কাজের জন্য সেলারি পাবেন। কি মজা, তাই না! কিন্তু এই প্রসেসটাই আবার আপনার জীবনকে জটিল করে তুলবে। আপনার RA/TA/GA কাজের জন্য নিজেকে একজন Employee মনে হবে, কিন্তু আপনি আমেরিকার employee হিসেবে এর জন্য আর কোন সুবিধা পাবেন না। আবার আপনি স্টুডেন্ট হলেও, স্টুডেন্টদের সুবিধা গুলো নেওয়ার সুযোগ পাবেন না। কারন, ক্লাসের সময় বাদে বাকি সময়টা আপনাকে ল্যাবে কাজ করতে হবে। যেমনঃ সব স্টুডেন্ট Black holiday তে ৭ দিন ছুটি কাটাবে। কিন্তু আপনি যেহেতু গ্রাজুয়েট স্টুডেন্ট, তাই আপনাকে সেই সময় ল্যাবে কাজ করতে হবে। ফলে আপনার ছুটি হয়ে যাবে ২ দিন। আবার পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর সবাই যখন একটু রিলাক্স করবে, তখন আপনাকে হয়ত ল্যাবের নেক্সট প্রজেক্ট নিয়ে ভাবতে হবে। এইসব কিছু মেনে নিয়ে মনের দুংখে হয়ত ফেসবুকে status complicated করে দিতে ইচ্ছা হবে।

তবে এতে এত কষ্ট পাওয়ার কিছু নেই। আপনি এই পথ বেছে নিয়েছেন বলেই আমেরিকার মত দেশে হাজার ডলার টিউশন ফি ছাড়াই পড়ার সুযোগ পাচ্ছেন। যারা পরীক্ষা শেষে রিলাক্স করে, তাদের সেই পরীক্ষা দেওয়ার জন্য অনেক ডলার খরচ করতে হয়েছে। এমনকি অনেক স্টুডেন্ট এক সেমিস্টার জব করে টাকা জমায়, আর পরের সেমিস্টার সেই টাকা দিয়ে ক্লাসে ভর্তি হয়। এই বিষয়টা মাথায় রাখলে আপনি নিজেকে বরং ভাগ্যবান মনে করতে পারেন।

"মুখে অনেকেই বলে থাকে, গ্রেড অতি তুচ্ছ। কিন্তু  গ্রেডই অনর্থের মূল"
যদিও অনেকে বলে থাকে, আমেরিকাতে গ্রেড তেমন ব্যাপার না, কিন্তু ফান্ডিং টিকেই রাখার জন্য গ্রেডই আসল। তবে এর জন্য আপনাকে আহামরি ভাল গ্রেড করতে হবে তা নয়! অনেক ভার্সিটির ক্ষেত্রে B+ বা B গ্রেড হলেই চলে। তবে এখানে গ্রেডের স্কেল আমাদের দেশের মত না। আমাদের দেশে ৮০ তে A+, কিন্তু এখানে ৯০ তে A গ্রেড। তারপর প্রতি ৫ বা ৩ নাম্বারের জন্য একটি করে গ্রেড কমতে থাকে। তাই, কোন কিছুতে (assignment, quiz, paper presentation, mid term, project or final exam) একবার ৫/৩ নাম্বার কম পেলেই আপনার একটা গ্রেড মিস হয়ে যাবে। তাই, এই বিষয় গুলো শুরু থেকেই খেয়াল রাখবেন। ক্লাসের প্রথম দিনেই ক্লাস টিচারের কাছ থেকে জেনে নিন, তার ক্লাসের গ্রেডিং স্কেল।

"ফুল ফুটুক বা না ফুটুক, আপনি বিবাহযোগ্য"
আমেরিকায় আপনি কোন বাঙ্গালির সাথে পরিচয় হলেই কথা বলার একটা পর্যায়ে আপনাকে বলবে, "তারপর নেক্সট প্ল্যান কি? বিয়ে কবে করার ইচ্ছা?" ভাবটা এমন, যেন আপনি ভালই ভালই জীবনের সব গুলো লেভেল পাড় হয়ে গেছেন, এখন আপনার একটাই কাজ করা বাকি, আর সেটা হল বিয়ে।   নিজেকে হঠাৎ বিয়ের বাজারে ভাল একটা পণ্য হিসেবে মনে হতে পারে।

কিন্তু সত্যি যখন বিয়ে করতে যাবেন, তখন দেখবেন আপনার পছন্দের মত কাউকে পাচ্ছেন না। একজন মানুষের সবকিছু আপনার ভাল লাগবে না, আবার আপনার পরিবারের অনেক কিছুর সাথে আরেকজনের পরিবারের অনেক কিছু ম্যাচ হবে না। এটা খুবই স্বাভাবিক বিষয়। এই বিষয় গুলো মেনে নিন এবং সময় নিয়ে বিয়ের মত গুরুত্বপূর্ন বিষয়ের সিদ্ধান্ত নিন। প্রয়োজনে আপনার বন্ধু বা সমসাময়িক কাজিনদের পরামর্শ নিন, কিন্তু নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নিন।

Thanksgiving party with supervisor and labmates
"নাহি জাতি, নাহি আচার, তবু কি সুন্দর ব্যবহার"
আচ্ছা, আপনার ধর্ম কি?, কোন জাত?, এইবারের নির্বাচনে কে জিতবে?, কাকে ভোট দিবেন?, আচ্ছা, আপনার CGPA কত, এইবার কি মাস শেষে বোনাস পেয়েছেন? কত পেয়েছেন,  আপনি কি বাসে করে ক্যাম্পাসে আসেন?, ঐ ছেলেটিকে দেখেছেন - প্রতিদিন এক জামা পড়ে আসে আর দুপুরে একই ধরনের খাবার খায় - এই ধরনের প্রশ্ন গুলো আমাদের দেশে খুবই কমন হলেও আপনি আমেরিকানদের কাছ থেকে কখনই এই প্রশ্ন গুলো শুনতে পারবেন না। ধর্ম, রাজনীতি, আপনার ব্যাক্তিগত জীবন নিয়ে তাদের কোন আগ্রহ নেই। তবে আপনি যে প্রশ্নই করুন না কেন, হাসি মুখে তার জবাব দিবে। গ্রীষ্ম, বর্ষা, শীত - এদের মুখে হাসি লেগেই থাকে। এটা তাদের একটা স্বভাব। তাই, তাদের হাসি দেখে কখনই মনে করবেন না তারা আনন্দে আছে বা আপনাকে খুব পচ্ছন্দ করছে।
আমেরিকানদের সম্পর্কে আরো বিস্তারিত জানতে নিচের ৪নং রেফারেন্স লিংকটি দেখুন।

"মানুষ আমাকে কি বলবে? সেটা আপনার ভাবার দরকার  কি??"
আমেরিকায় এসে আপনি নানান দেশের মানুষের সাথে কাজ করার সুযোগ ভাবেন। তাদের আচারন, খাবার, পোশাক - আপনার কাছে অদ্ভুত মনে হতে পারে। কিন্তু তারা আসলে নিজেদের কালচারকেই প্রকাশ করে এবং সমস্ত কাজেই খুব স্ট্রেট ফরওয়ার্ড। কিন্তু একবার আমাদের নিজেদের দিকে তাকিয়ে দেখবেন আমরা অনেক কিছুই "লোকে কি বলবে? - এই ভেবে সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকি।

ছোট একটা উদাহরণ দিচ্ছিঃ ধরুন, আপনি আমেরিকা থেকে গ্রাজুয়েশন পাশ করে দেশে গেছেন। তখন আপনার আশে পাশের মানুষই বলবে "ভাল কিছু করতে পারেনি, তাই দেশে ফেরত চলে এসেছে। একবার বাইরে গেলে কেউ কি আর ফিরে আসে নাকি!" আবার আপনি পাশ করার পর দেশে না আসলে তারাই বলবে, "তোমরা তো দেশ কি জিনিস তা ভুলেই গেছ। দেশ থেকে সব শিখে এখন বাইরে থাকার প্ল্যান কর। এই কারনেই আমাদের দেশের কিছু হয়না।" তাই, মানুষ কি বলছে বা মনে করবে সেটা চিন্তা না করে, আপনার কি করতে ইচ্ছা করে এবং কি করা উচিত - সেটা চিন্তা করুন।

"যে স্রোতে ভাসি, তাতেই আবার ডুবি"
সবাই বাইরে পড়তে যাচ্ছে তাই আমাকেও যেতে হবে। না হলে, আশে পাশের মানুষ কি বলবে! ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, বুয়েট হতে ভাল রেজাল্ট করে কেউ কি দেশে বসে থাকে নাকি! সময়ের স্রোত থেকে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকি আমেরিকায় পড়তে আসার, আর তারপর সেই আমেরিকায় এসে সেখানে খাপ খাওয়াতে ব্যস্ত হয়ে পড়ি। আর আমাদের মাঝে যে স্বপ্নটি ছিল, ভাল রিসার্চ কাজ করার, নিজের দেশকে রিপ্রেজন্ট করার - সেই স্বপ্নটি হারিয়ে যায়।
The main campus gate of Temple University
আপনি আমেরিকায় অনেক পরিশ্রম করে এসেছেন আপনার স্বপ্ন পূরন করতে। এখানে আসার পরও আপনাকে আরো অনেক পরিশ্রম করতে হবে সেই স্বপ্ন পূরন করার জন্যে। তাই, সর্বদা সেই স্বপ্নটিকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করবেন। আশেপাশের মানুষ জন পার্টিতে যাচ্ছে, নাকি ঘোরতে যাচ্ছে, নাকি আপনাকে নিয়ে কোন মন্তব্য করছে; সেই সবকিছু অনেক তুচ্ছ হয়ে যাবে যেদিন আপনি আপনার নিজের ইচ্ছা আর স্বপ্নের কাছে পৌঁছাতে পারবেন।

সেই শুভ দিনটির প্রত্যাশায়, শুভ কামনা।
- আশীষ চন্দ।

References:

[1] Piled higher and deeper movie ("If you think it is a funny movie, then Ph.D. life is full of fun" - Jorge Cham)

[2] http://ishakkhan.blogspot.com/2016/05/higher-study-abroad-related-posts.html

[3] "Press on restart button" - TED video [It does not matter what you did, how much good were you, you need to prove again that you can do best.]


মন্তব্যসমূহ