"কি রাশেদ সাহেব, মিষ্টি কিনছেন নাকি?"
"হ্যাঁ, পহেলা বৈশাখ বলে কথা।"
"কিন্তু তাই বলে এত মিষ্টি!!"
করিম সাহেবের ইঙ্গিতটা রাশেদ সাহেব ঠিকই ধরতে পারলেন। হেসে বললেন, "বাড়ির অন্য সব ছেলে মেয়ের জন্যেই নিচ্ছি।"
আসলে রাশেদ সাহেবের ছেলেমেয়েরা এখন আর দেশে থাকেনা, আর তাই করিম সাহেবের কৌতুহল, এত মিষ্টি দিয়ে কি হবে! রাশেদ সাহেবকে দেখলেই করিম সাহেবের হিংসা হয়, আর তাই খোঁচা দিয়ে কথা বলতে পছন্দ করেন। কিন্তু মনে মনে বলেন, "ইস, উনার ছেলেমেয়েদের সবাই আজ দেশের বাইরে থাকে। যদি আমার ছেলেমেয়ে গুলোও বাইরে যেতে পারত, তবে কত ভাল হত।" কিন্তু করিম সাহেবের ছেলে মেয়েরা যে খারাপ অবস্থানে আছে তা কিন্তু নয়, তবু নিজের থেকে অপরের সুখই বেশী মধুর মনে হয়।
অথচ অপরদিকে করিম সাহেবকে দেখে রাশেদ সাহেবের নিজের প্রতি আফসোস হয়। "ইস, মানুষটা কত খানি ভাগ্যবান। ছেলে মেয়ে নাতি-নাতনি - সবাইকে নিয়ে কত সুখে একসাথে থাকে। আমার আর সে ভাগ্য কবে আসবে! কবে ছেলেমেয়ে গুলোকে আবার একসাথে একই টেবিলে বসে খেতে দেখব!! আবার কোন ঈদে বা বৈশাখের বিকাল বেলায় ঘরে আড্ডা হবে, সবাই মিলে চা খাওয়া হবে, গরম গরম ভাঁজা চপ আগে খাওয়া নিয়ে কাড়াকাড়ি হবে, ঘরটি হইচই আর হাসির শব্দে ভরে উঠবে! আর কি কোনদিন এমনটা হবে, নাকি আর হবেই না।"
কথা গুলো ভাবতে ভাবতে রাশেদ সাহেব মিষ্টির দুটি ভারী প্যাকেট নিয়ে দোকান থেকে বের হলেন। মিষ্টির প্যাকেট হাতে নিয়ে হাঁটতে তার খুব কষ্ট হচ্ছে। এমন সময় একটি ছেলে দৌড়ে এসে তার হাত থেকে মিষ্টির প্যাকেট দুটি নিজের হাতে নিয়ে হাসতে হাসতে বলল,
"চাচা, আমার কাছে দিন। আপনি এত কষ্ট করতে যাবেন কেন? মিষ্টি গুলো তো আমাদের জন্যেই নিচ্ছেন, আমাকেই নিয়ে যেতে দিন।"
রাশেদ সাহেবও হেসে বললেন,
"হ্যাঁ, কিন্তু তাই বলে সব মিষ্টি তুই আর তোর বন্ধুবান্ধব মিলেই শেষ করে দিস না, রিমি, সুমি আর তোর চাচীর জন্যেও কিছু রাখিস।"
"চাচা, আমাদের জন্যে তো চাচীর হাতের মিষ্টি চা-ই যথেষ্ট।"
দুজনেই হাসতে হাসতে বাসার পথে হাঁটতে শুরু করলেন।
জীবন অদুভত।
জীবন অদুভত রকমের সুন্দর, অদুভত রকমের কষ্টময়।
- - ছোটগল্পঃ আনন্দ ছায়া
- - উৎসর্গঃ বাস্তব জীবনের রাশেদ সাহেব।
- - উৎসর্গঃ বাস্তব জীবনের রাশেদ সাহেব।
- - ৭ ই বৈশাখ, ১৪২৬
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন