সেই ছেলেটিকে কি এই শহর মনে রেখেছে?
যে ছেলেটি সকালে রাস্তায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে স্কুলের বাইরের দেওয়ালে যে প্রতিদিনের পত্রিকা লাগানো হত - সেটি পড়ত। সেই ছেলেটি যে কিনা ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্যে রাস্তার মোড়ের দেবদারু গাছের ছায়ায় দাঁড়িয়ে থাকত, আর রাস্তায় মানুষের ছুটে চলা দেখে নিজেই নিজের আনমনে নতুন গল্প বানাত।
সেই সাধারন ছেলেটিকে কি মসজিদের পাশের ভিক্ষুকটি মনে রেখেছে? যে নাকি তার ভার্সিটি থেকে ফেরার সময় তার টিফিনের অবশিষ্ট খাবারটুকু তাকে দিয়ে দিত? আচ্ছা, খাবারটি কি সে খেতে পারত না, নাকি ইচ্ছা করেই খেত না। সেই কথাটি এখন আর জানার কোন উপায় নেই।
সেই ছেলেটিকে কি ফারুক ভাই মনে করে? যার সেলুনে প্রায়ই ছেলেটি যেত চুল কাটানোর জন্যে। ছেলেটি যে রকমারি ডিজাইনে চুল কাটতে যেত তা কিন্তু নয়, বরং চুল বড় হলেই তার কেমন অসহ্য লাগত। তাই সব সময় ছোট করে কেটে রাখত। আর তাই ফারুক ভাই তাকে খুব পছন্দ করত। একবারে নির্ভেজাল কাস্টমার - যার কোন ঝামেলা নেই, চাহিদা নেই, কেবল তার প্রয়োজনটুকু হলেই হত।
আচ্ছা, সেই শুক্রবারের বিকালের খেলার মাঠ, নদীর পাড়ের চায়ের দোকান, পিছনের ছাদের কবুতরের ঝাঁক - তারা কেউ কি মনে করে সেই ছেলেটিকে, সেই ছেলেটির রোদে পোড়া কালো মুখটিকে? যে মুখটিতে একটি ছোট হাসি সর্বদা থাকত। কিন্তু কেউ জানত না সেই হাসির কারন কি? এখনও কেউ জানে না, আর কোন দিনই হয়ত কেউ জানবেও না।
সেই ছেলেটি একদিন হঠাৎ এই শহরে এসেছিল, আবার একদিন হঠাৎ চলে গেছে। তার আগমনে কোন আলোড়ন হয়নি, তেমনি তার এই হারিয়ে যাওয়াতেও হয়নি কোন কিছুর পরিবর্তন। এই শহরে কত ছেলে প্রতিদিন আসে, কতজন চলে যায়, কে যায় কার খবর রাখতে। হয়ত কেবল বিড়াল ছানাটা প্রতি রাতে ঘরের বাইরে এসে ঘোরাঘুরি করে যায়, ছেলেটিকে খোঁজে, হয়ত ছেলেটির রাতের খাবারের মাছের কাঁটা গুলো খাওয়ার জন্যে।
- - ছোটগল্পঃ সেই ছেলেটি
- - উৎসর্গঃ সেই ছেলেদের
- - ১৫ জ্যৈষ্ঠ, ১৪২৬
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন