স্মৃতি পর্ব: ১

 প্রিয় বন্ধু মিতা,

কেমন আছিস? আশা করি, মা কালীর কৃপায় ভাল আছিস। যার নিত্যদিন মায়ের আরোধনায় কাটে, তার তো ভাল থাকারই কথা।

আমিও ভাল আছি। তবে মাঝে মাঝে আমাদের সেই ছোটবেলার দিন গুলোর কথা মনে পড়ে যায়। এই ডিস্মেবর মাসে স্কুল ছুটে হলে, খেলার মাঠে কিক্রেট খেলতে যেতাম, বিজয় দিবসে তোদের মন্দিরে পতাকা লাগাতাম, আবার  তুই তোদের মন্দিরে ঠাকুর পূজা দিতি, আর আমি বাইরে দাঁড়িয়ে কাঁসা বাজাতাম।মাঝে মাঝে রাস্তায় দুই একজন লোক এসে দাঁড়াত, তবে বেশীর ভাগ সময়ই তুই আর আমিই থাকতাম। 

না, আরেকটা প্রানী থাকত আমাদের মাঝে। মন্দিরের ইট সুড়কির মোটা দেয়ালের মাঝে অনেক সময় একটা ইদুর দেখা যেত। হয়ত পূজার প্রসাদ খাওয়ার জন্যই ঘুরঘুর করত। 

এখন আমি আর আমার আশে পাশে সেই ইট সুড়কির মোটা দেয়াল দেখতে পাই না, ইদুরেরও দেখা পাওয়া যায় না। শোনতে পাইনা সেই কাঁসার শব্দ, খাওয়া হয় না সাবু, কলা, চিনি দিয়ে মাখা প্রসাদ।

আচ্ছা, তোর কি এখন গল্পের বই পড়া হয়? আমার গল্পের বই পড়ার অভ্যাসটা কিন্তু তোর কাছ থেকেই শুরু হয়। মনে আছে? তোর কাছ থেকে কত ভূতের বই আর রূপকথার বই নিয়ে পড়েছি ছোটবেলায়। 

তারপর যখন একটু বড় হলাম, তখন থেকে শুরু করলাম ফেলুদার গল্প পড়া। শার্লক হোমসের নামটাও মনে হয় তোর কাছ থেকেই শুনেছিলাম।

তারপর একদিন সেতুর কাছ থেকে তিন গোয়েন্দার বই নিয়ে পড়লাম। পড়ে জানলাম সেতু, রনি, দেবাশিষ আর তুই - তোরা সবাই এই বই পড়ার পাল্লায় আছিস। ব্যাস, আমিও যোগ দিয়ে ফেললাম। 

দুজনে মিলে কত  তিন গোয়েন্দার বই পড়েছি, তার হিসেব নেই,  একশের বেশী কিন্তু কম হবেনা। বই পড়ার আর কেনার নেশাটা আমার থেকে তোরই সব সময় বেশী ছিল। এই নিয়ে মাসির কাছে তোকে কত ঝাড়ি খেতে হত। কিন্তু তবু তোর গল্পের বই পড়া ছাড়াতে পারেনি।

কিন্তু সময়ের সাথে সাথে আমাকে তোকে ছেড়ে দূরে চলে যেতে হয়েছে। ক্লাসের পড়া নিয়ে, আর বড় হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে অনেকটা দূরে সরে গেছি। তবু মাঝে মাঝে মন্দিরের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় ভেতরে উকি দিয়ে দেখতাম, তোকে দেখা যায় কিনা। দেখা হলে, হাই- হ্যালো বলেই আবার নিজের কাজের জন্যে মন্দির থেকে বের হয়ে যেতাম। কত বড় সবার্থ পর আমি! কম্পিউটারে গেমস খেলে, মুভি দেখে কত সময় নষ্ট করেছি, কিন্তু ছোটবেলার বন্ধুর সাথে ঘণ্টা খানেক গল্প করার আর সময় হত না।

অথচ তোর কাছ থেকেই জীবনের একটি অন্যতম ভাল অভ্যাস আমি শিখেছি, বই পড়ার অভ্যাস। আমি ভাগ্যবান যে, ছোটবেলায় তোর মত একটা বন্ধু পেয়েছিলাম যার সাথে আমার স্কুল জীবন শুরু হয়েছিল, বইয়ের কল্পনার জগতে হাঁটা শুরু হয়েছিল। 

আবারো যদি কোন একদিন সময় পাই, তবে তোদের মন্দিরের সেই খোলা জায়গায়টাই বসে আবার দুইজনে একসাথে বই পড়ব। সেই দিনটির অপেক্ষায় থাকলাম।

ভাল থাকিস। 

ইতি,

মিতা।

You sent December 10, 2019

মন্তব্যসমূহ